সূচিপত্র
আজকের আলোচনা যেকোনো পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায় সম্পর্কে। আল্লাহ সবাইকে একরকম মেধা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান না। তাই সবাইকে আইনষ্টাইন-নিউটন হতে হবে এমন কোন কথা নেই আবার সবাই ক্লাসের ফার্স্ট বয়ও হবে না। অন্যরা যেখানে ১ঘন্টায় একটা পড়া শিখে নিতে পারে এদের ক্ষেত্রে সেটা বড়জোর দুই ঘন্টা লাগতে পারে। অর্থাৎ হতাশ হওয়ার কিছু নেই, শুধু একটু বেশি সময় দিয়ে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। মস্তিষ্কের চর্চা করলে তার কার্য্যক্ষমতা বাড়ে সুতরাং ধৈর্য্যসহকারে চেষ্ঠা করলে একটা সময় অন্যদের ডিঙিয়ে যাবেন।
পড়া মনে থাকে না বা যা পড়ি সব ভুলে যাই এ সমস্যা ছাত্রছাত্রীদের কমবেশী সবার মধ্যেই আছে। অনেকে সঠিক নিয়মে না পড়ে বেশি পড়েও কয়েকদিন পর তা ভুলে যায়। আবার অনেকে পড়া মনে রাখার জন্য কিছু কৌশল ব্যবহার করে এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবলীলায় মনে রাখতে সক্ষম হয়। সঠিক কৌশল প্রয়োগ করে না পড়লে পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। পড়া সহজে মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়।
পড়ার সঠিক সময় নির্ধারন করুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
শিক্ষার্থীরা সাধারনত ভোর বেলা ও সন্ধা বেলায় পড়াশোনা শুরু করে। তবে বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠার পর আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে সতেজ থাকে এবং এ সময় খুব সহজেই পড়া মনে থাকে। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সন্ধ্যা থেকে রাতের পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে ভোর বেলায় পড়ার অভ্যাস করতে হবে।
পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসা। খেলা বা মুভি দেখার সময় আপনি যেমন আগ্রহ ও জেতার আসা নিয়ে বসেন তেমনি পড়ার সময়ও নিজের ভিতর থেকে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। পড়া কঠিন, মনে থাকে না, বুঝিনা এসব পূর্বধারণা থেকে বেরিয়ে খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। পড়াশুনা আমাদের সবার কাছে কমবেশি কঠিন বিষয়। আর এ কঠিন বিষয়টিকে যদি সহজ ও মনে রাখার উপযোগী করতে হয় তাহলে আগ্রহ থাকাটা আবশ্যক। কেননা যে কাজে আগ্রহ থাকবে না সে কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন হয় না।
কী ওয়ার্ড | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
যে কোন বিষয়ের কঠিন অংশগুলো ছন্দের আকারে খুব সহজে মনে রাখা যায়। যেমন: রংধনুর সাত রং মনে রাখার সহজ কৌশল হলো ‘বেনীআসহকলা’ শব্দটি মনে রাখা। সাতটি রংয়ের প্রথম আদ্যাক্ষর রয়েছে শব্দটিতে। তেমনি আবার ইংরেজী ‘লেফটেনেন্ট’((Lie,u,ten,ant) ) শব্দটির বানান মনে রাখতে ‘মিথ্যা তুমি দশটি পিপিলিকা’ মনে রাখলেই বানানটি হয়ে যাবে।
অল্প অল্প করে মনোযোগ দিয়ে পড়া | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
কোন কিছু মনে রাখতে হলে তা বিভিন্ন অংশ বা সেগমেন্টে ভাগ করে পড়া বেশ উপকারী। যেমন: ৪৬৭৮৯০ এ সংখ্যাটি মনে রাখা যতটা সহজ তার চাইতে ৪৬৭ এবং ৮৯০ মনে রাখা আরও বেশী সহজ। আমরা পাঠ্য বইয়ের অনেক সংঙ্ঘা পড়তে ভয় পাই কিন্তু বড় সংঙ্ঘাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে পড়লে মনে রাখা সহজ। কারণ আমাদের ব্রেন অনেক বড় বিষয়ের চেয়ে ছোট বিষয় বেশি মনে রাখতে পারে।
লিখে পড়ার অভ্যাস করতে হবে | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
লিখে পড়লে আমাদের ব্রেনের অনেক বেশি এলাকা উদ্দীপ্ত হয়। লেখার সাথে ব্রেনের যে অংশগুলো জড়িত তা তথ্যকে স্থায়ী মেমোরীতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে। এছাড়া মানুষ কোন কিছু লিখতে চাইলে উক্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ বেড়ে যায় যা স্থায়ী মেমোরি তৈরিতে সহায্য করে।
মার্কার ব্যবহার করা | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
অনেকে পড়ার সময় মার্কার ব্যবহার করে এটা বেশ কার্যকর। কারণ যখন কোন কিছু মার্ক করা হয় তখন ঐ শব্দ বা বাক্যের উপর আগ্রহ ও আকর্ষণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর উপর ব্রেনের ভিজ্যুয়াল এফেক্ট বেড়ে যায়। ফলে মনে রাখতে সুবিধা হয়।
সন্ধ্যার পর পড়াশোনা করা | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সকাল দশটার আগে মানুষের ব্রেন ক্রিয়াশীল হয় না। এই সময়ের পর থেকে ধীরে ধীরে ব্রেনের ক্রিয়াশীলতা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বিকালের পরে ব্রেনের ক্রিয়াশীলতা বাড়ে। তাই সকালের পড়া থেকে বিকাল বা সন্ধ্যার পর পড়া বেশী কার্যকর।
পর্যাপ্ত ঘুম | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
ব্রেন মূলত স্মৃতি তৈরির কাজ করে ঘুমের ভিতর। গবেষণায় দেখা গেছে সারাদিনের কাজ বা ঘটনাগুলো ঘুমের সময় মেমোরিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে যে কোন তথ্য মেমোরিতে রূপান্তরিত করতে চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
মুখস্থ বিদ্যাকে না বলা | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
মুখস্থ বিদ্যা চিন্তাশক্তিকে অকেজো করে দেয়। পড়াশোনার আনন্দও মাটি করে দেয়। কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা বেশিদিন স্মৃতিতে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু তার মানে এই নয় সচেতনভাবে কোন কিছু মুখস্থ করা যাবে না। টুকরো তথ্য যেমন: সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যাক্তির নাম, বিজ্ঞানের কোন সূত্র ইত্যাদি বুঝে মুখস্থ করতে হবে।
রিভাইজ | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
গবেষণায় দেখা গেছে আমরা আজকে সারাদিন যত কিছু পড়ি শুনি জানি বা দেখি তা পাঁচ দিন পর চার ভাগের তিন ভাগই ভুলে যাই। এ ভুলে ঠেকানোর জন্য কিছু টিপস আছে যেমন: ৪৫ মিনিট পর ১৫ মিনিট ব্রেক এবং সেই ব্রেকে মনে মনে সে পড়াটা রিভাইজ দেয়া এবং কোথাও আটকে গেলে তা আবার দেখে নেয়া। আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়ে আগামীকাল ঘুমানোর আগে উক্ত পড়া রিভাইজ দেয়া। তারপর এক সপ্তাহ পর পুনরায় রিভাইজ দিলে দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
বিরতি দিন এবং হাঁটুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
একটানা অনেকক্ষণ পড়লে অস্থিরতা চলে আসবে। বেশ কিছুক্ষণ পড়ার পর ১৫-২০ মিনিট হেঁটে আসুন। এতে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে এবং মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে।
নিজেই শিক্ষক হয়ে যান | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে উঠুন। কি পড়লেন, কি মুখস্থ করলেন ইত্যাদি বুঝতে নিজেই শিক্ষক হিসেবে মূল্যায়ন করুন। নিজেই পরীক্ষা দিন এবং তা যাচাই করুন।
নোট করুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
যাই শিখবেন তাই লিখে ফেলুন, নোট করুন। লেখা হলে তা দ্রুত মাথায় ঢুকে যাবে এবং সহজে ভুলবেন না। এছাড়া গুছিয়ে নোট করলে পরীক্ষার সময় সহজে রিভিশন দিতে পারবেন।
গ্রুপ ষ্টাডি করুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
নিজে শিখার পর পাঠটি অন্যকে শিখানোর চেষ্ঠা করুন, তাতে অনেক দিন মনে থাকবে। ইংরেজী ভাষা শিখতে গ্রুপ ষ্টাডি সবচেয়ে কার্যকরী। প্রতিদিন ২-৩জনে মিলে গ্রুপ ষ্টাডি করলে নিজের ভুলগুলিও শুধরে নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে গ্রুপ ষ্টাডি করার জন্যে একটি পৃথক ও নির্দ্দিষ্ট সময় নির্ধারন করে নিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি হাইলাইট করুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
পড়ার সময় মার্কার পেন পাশে রাখুন। পাঠের গুরুত্বপূর্ণ অংশসমুহ মার্ক করে রাখুন। এতে ঐ অংশে মনেযোগ বাড়বে এবং পরীক্ষার পূর্বে রিভিশন দেয়ার সময় সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে।
অর্থ বুঝে পড়ুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
ইংরেজি পড়ার আগে শব্দের অর্থটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ইংরেজি ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হলো শব্দের অর্থ জেনে তা বাক্যে প্রয়োগ করা। বুঝে না পড়লে পুরোটাই বিফলে যাবে। অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও কী পড়ছেন তা বুঝতে চেষ্ঠা করুন।
সারমর্ম বা সামারাইজিং করুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
বড় কোন লেখাকে ছোট করে নিলে তা সহজেই মনে থাকে। এছাড়া কোন একটি বড় পাঠকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে পড়লে তা সহজে মনে থাকবে।
জোরে জোরে পড়ুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
জোরালো কণ্ঠে পড়ুন | পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল
জোরে পড়লে মাথায় তথ্য দ্রুত ঢুকে যায়। যেমন একটি গান যখন শোনেন, তখন তা দ্রুত মনে পড়ে। যা পড়ছেন তা নিজের কানে জোরে প্রবেশ করলে দ্রুত মুখস্থ হবে।
রিডিং পড়ার সময় খাতায় লেখুন | পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়
রিডিং পড়ার সময়ও খাতা-কলম নিয়ে বসুন। রিডিং পড়ে পাঠ অন্তস্ত করার সময় প্রায়ই পূর্ণ মনযোগ দিতে পারছেন না, মনে রাখতে পারছে না বা কখনো এমন হয় যে বিষয়টা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারছেন না। এক্ষেত্রে পাঠটি রিডিং পড়ার সাথে সাথে জটিল ও কঠিন শব্দ, বাক্য বা সুত্রুলি খাতায় লেখলে তা দ্রুত অন্তস্ত হয় ও দীর্ঘ সময় মনে থাকে।
তবে উল্লেখ্য যে- আধুনিক প্রযুক্তির সু-ব্যবহারে সুফল ও অপব্যবহারে কুফল দুটুই আছে। যেমন- মোবাইল আসক্তি বা মোবাইল গেম, ইন্টারনেট আসক্তি, টিভি, কম্পিউটার স্ক্রিনের রেডিয়েশন আমাদের মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে যা স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে ও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। তবে শিশুদের জন্যে এসব অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে সাবধান হতে হবে ও শিশুদের নিরাপদ রাখতে হবে।
সহজে পড়া মনে রাখার প্রদত্ত কৌশলগুলি আপনার কাজে আসলে আমরা অত্যন্ত খুশি হব আর প্রিয়জন বা পরিচিত জন কাজে আসতে পারে মনে হলে অবশ্যই তাকে শেয়ার করবেন।
পরবর্তী আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে Uipoka fan page