সূচিপত্র
একনজরে নতুন শিক্ষাক্রম 2023? কি কি পরিবর্তন হচ্ছে নতুন শিক্ষা নীতিতে?
নতুন শিক্ষাক্রম অনুমোদন হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তও কোনও পরীক্ষা থাকছে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে ১০টি বিষয় প্রবর্তন করা হলেও বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বলতে মাধ্যমিকে কোনও বিভাগ থাকবে না। এটি চালু হবে এইচএসসিতে।
কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই বোর্ড পরীক্ষায় এসএসসির ফল হবে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আলাদা দু’টি বোর্ড পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে হবে এইচএসসির ফল।
এক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ শতাংশ এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাক্রম সারাদেশে ৬১টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পাইলটিং চলছে। এরপর ২০২৩ সালে সপ্তম শ্রেণির পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাইলটিং হবে।
২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে কেবল এসএসসি ও এইচএসসিতে দু’টি বোর্ড পরীক্ষা রেখে শিক্ষাক্রমের নতুন রূপরেখার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো- ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন ঠিক রেখেই জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রূপরেখা অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুদিন ছুটি থাকবে।
এক নজরে নতুন শিক্ষাক্রম ২০২৩
- ২০২৩ সাল থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে (শুক্র ও শনিবার) দু’দিন ছুটি থাকবে
- প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি)/ইবতেদায়ী ও জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ, দশম শ্রেণির আগে কোনো কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষা নেই।
- তৃতীয় পর্যন্তও কোনো পরীক্ষা থাকবে না।
- চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
- বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বলতে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ থাকবে না। এটি চালু হবে এইচএসসিতে।
- দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই বোর্ড পরীক্ষায় এসএসসির ফল হবে
- প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন।
- প্রাথমিকে পড়তে হবে ৮টি বই।
নতুন শিক্ষাক্রম 2023 কমছে পাঠ্য বিষয়
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরা শেখাবেন। প্রাথমিকের জন্য আটটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে ‘ভালো থাকা’ এবং ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে আলাদা বই থাকবে না। এগুলো শিক্ষকেরা শেখাবেন, যার জন্য নির্দেশনামূলক বই দেওয়া হবে।
আর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বই পড়ানো হবে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, জীবন ও জীবিকা, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে মাধ্যমিকে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয়। আর নবম শ্রেণিতে শাখা বিভাজন হয়। নতুন শিক্ষাক্রমে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তন হবে।
কবে থেকে নতুন বই
এনসিটিবির সূত্রমতে, প্রথম বছর (২০২২) প্রাক্-প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি, প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি বই পাবে। এর পরের বছর (২০২৩) অষ্টম শ্রেণি এবং ২০২৪ সালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়া হবে। ২০২৬ সালে উচ্চমাধ্যমিকের বই দেওয়ার কথা।
যেভাবে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণির আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা)। একইভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।
দশম শ্রেণিতে গিয়ে হবে পাবলিক পরীক্ষা। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। দশম শ্রেণির মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে ৫টির পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। বাকি পাঁচটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। এখন গড়ে ৩২ কর্মদিবস লাগে এসএসসি পরীক্ষা নিতে। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পাঁচ কর্মদিবসেই পরীক্ষা শেষ হবে।
শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ৬টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। একাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় পড়বে, সেই শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের (মোট তিনটি) পরীক্ষা হবে।
অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে। আর দ্বাদশ শ্রেণিতে নিজ নিজ শাখার তিনটি বিষয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রের মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতি শাখার তিনটি বিষয়ের প্রতিটির জন্য তিনটি পত্র থাকবে। দুই পরীক্ষার সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে।
নিয়মিত শিক্ষা বিষয়ক আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে ফলো করুন ==> https://www.facebook.com/uipoka.com.1